মহামারিতে জীবন স্তব্ধ। সমাজ স্তবির। রাজনীতি প্রায়-অচল। চলছে না অর্থনীতির চাকা। আর এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে, মহামারিকালে জন্মানো শিশু হতে পারে কর্মক্ষমতাহীন!
গবেষকরা অতীতের রেকর্ড ঘেঁটে বের করেছেন এমনই মারাত্মক তথ্য। একশো বছর আগের দৃষ্টান্তকে নিয়ে এসেছেন সামনে। আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লু প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল কম করে পাঁচ কোটি মানুষের (করোনাভাইরাসের শিকার এখন পর্যন্ত দশ লক্ষ)। এই পাঁচ কোটি মানুষের অধিকাংশই ছিলেন অপেক্ষাকৃত তরুণ, পঁচিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যে তাঁদের বয়স।
কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায়, ওই একই বয়সের যাঁরা বেঁচে ছিলেন, তাঁদের ভাগ্য যায় খুলে। ছাপাখানার দফতরি থেকে কারখানার শ্রমিক, আমেরিকার খেটে খাওয়া মানুষের ঘণ্টাপ্রতি মজুরি প্রায় কুড়ি-পঁচিশ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু সামগ্রিক উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্যাহত হয়েছিল জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি। ওই সময়েই শেষ হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৪ থেকে ১৯১৭, তিন বছর ধরে ইউরোপে যুদ্ধের সরঞ্জাম ও অন্যান্য পণ্য রফতানি করে আমেরিকা প্রচুর মুনাফা করেও স্প্যানিশ ফ্লু-র অর্থনৈতিক ধাক্কা সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিতে পারেনি। স্বাভাবিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে ফিরতে বছর দুয়েক সময় লেগেছিল।
আরও প্রায় ছ’দশক পর গবেষকরা দেখলেন, সেই অতিমারির সময় যাঁরা জন্মেছিলেন, তাঁদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। স্প্যানিশ ফ্লু-র আগের বা পরের বছরগুলোতে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের তুলনায় অতিমারির বছরগুলোতে জন্মানো মানুষদের স্কুল বা কলেজের প্রথাগত শিক্ষাও অনেক কম। এবং মার্কিন সরকারকে এঁদের জন্য যা বেকারভাতা দিতে হয়েছে সারা জীবন ধরে, তা গড়পড়তার থেকে ঢের বেশি।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় এই সমস্যার দিকে নজর দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গবেষণা করছেন, করোনার মধ্যে জন্ম গ্রহণকারী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক গঠন নিয়ে। যদি শতবর্ষ আগের স্প্যানিশ ফ্লু সময়কালে জন্ম নেওয়া শিশুদের মতো সমস্যা চলমান করোনাকালে জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যেও পাওয়া যায়, তাহলে ঘটনাটি হবে মানব সভ্যতার জন্য বিরাট বড় দুঃসংবাদ।
পাঠকের মতামত: